Categories
প্রথম শ্রেণি

মোহরানা

নতুন বউ আসলে ছেলেপক্ষের আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের কমন প্রশ্ন “মেয়ে বাড়ি থেকে কি দিল?”

চট্টগ্রাম অঞ্চল তো আরও একধাপ উপরে… বিয়ের পর প্রথম কুরবানি ঈদে মেয়ের বাড়ি থেকে গরু গিফট না দিলে নাকি ছেলেপক্ষের মান ইজ্জত থাকে না। সাড়া বাংলাদেশেই এই লেনদেন প্রথা বেশ জনপ্রিয়… ছেলেপক্ষ এটাকে অনেকটা অধিকার হিসেবেই নেয়।

অথচ বিয়ের সময় কোন যৌতুক বা গিফট মেয়ের পরিবারের কাছে থেকে তো নেওয়া যাবেই না, বিয়ের পরেও জোর করে কোন কিছু আদায় করা যাবে না… ইসলামে এটি নিষিদ্ধ।

বরং বিয়ের সময় স্বামী উল্টো স্ত্রীকে দিতে বাধ্য থাকবে যেটার নাম মোহরানা। এরপর বাকি জীবন স্ত্রীর ভরণ পোষণসহ সকল অর্থনৈতিক দায়িত্ব স্বামীর একার। এমনকি স্ত্রী যদি চাকুরীও করে, সেই ইনকামে স্বামীর কোন অধিকার নেই।

স্ত্রী চাইলে সেটা নিজের জন্য খরচ করতে পারে কিংবা সংসারেও কাজে লাগাতে পারে। সেটা তার সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছা। তবে বিয়ের সময় বা পরে স্ত্রীর পরিবার নিজেদের ইচ্ছায় ছেলেকে কোন কিছু দিতে চাইলে সেটা নেওয়া বৈধ…

সমস্যা হল, বিয়ে জিনিসটাকে আমাদের দেশে অনেক কঠিন করে ফেলা হয়েছে… ছেলে পক্ষ যেমন যৌতুক দাবী করে, মেয়ে পক্ষও ছেলের সামর্থ্যের বাহিরে মোহরানা দাবী করে।

স্ত্রীর মোহরানা আদায় করা ফরজ। এটি স্ত্রীর হক। স্ত্রীকে স্পর্শ করার পূর্বেই তার মোহরানা আদায় করতে হয়। ফলে বেশি মোহরানা দাবী করা হলে স্বামী সম্পূর্ণরূপে তা পরিশোধ করতে পারে না। সমস্যা বাঁধে বাসর ঘরে। তখন স্ত্রী বাধ্য হয়ে স্বামীকে বাকি মোহরানা মাফ করে দেয় যাতে তারা বৈধভাবে মিলিত হতে পারে। কিন্তু এটি আসলে মোহরানার নামে ধোঁকা ও তামাশা ছাড়া আর কিছু না… মাফ নয়, মোহরানা যা ফিক্সড হবে সেটাই সম্পুর্ন পরিশোধ করে দিতে হবে… একসাথে কিংবা যদি পুর্বচুক্তি থাকে তবে কিস্তিতে। এরপর স্ত্রী চাইলে স্বেচ্ছায়, খুশি মনে মোহরের অংশ বিশেষ মাফ করে দিতে পারে কিংবা পুরোপুরিভাবে বুঝে নিয়ে কোন অংশ স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারে।

এই জন্য ইসলামি নিয়ম হল মোহরানা এমন পরিমাণ হবে যাতে স্বামী তা নগদে পরিশোধ করতে পারে। হযরত আলী (রা) যখন ফাতেমা (রা) কে বিয়ে করেন তখন একটি লোহার বর্ম মোহরানা হিসেবে দিয়েছিলেন..

বিয়ের শর্ত হল চারটি… ছেলে মেয়ের সম্মতি, সাক্ষীর উপস্থিতি, মেয়ের মোহরানা আর মেয়ের অভিভাবকের উপস্থিতি…

অথচ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা বিয়ের মত একটি সহজ জিনিসকে কত জটিল করে তুলেছে!